শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ অপরাহ্ন
কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, স্টাফ রিপোর্টার (সুনামগঞ্জ): জালিয়াতির মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হিসাব শাখা থেকে জমি অগ্রক্রয় মামলার ছয় বিচারপ্রার্থীর জমা ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৫ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আটক দুই আইনজীবীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর জেলহাজতে পাঠিয়েছে আদালত। সুনামগঞ্জ জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের নায়েব নাজির শিফাত শাহরিয়ার সোমবার বিকাল ৩টায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় চারজনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আদালত এলাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন দুই সাংবাদিক। এ ঘটানায় সাংবাদিক লাঞ্চনাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি। রোবাবার বিকাল ৪টায় আদালতে বিচারপ্রার্থীর জমি অগ্রক্রয় মামলার জমা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম (এপিপি), অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম এবং আদালতের হিসাবরক্ষক ঘেনু চন্দ্র রায়কে আদালত এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত মামলার অপর আসামি সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়ারা জজ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি আব্দুস সোবহানকে পুলিশ রোববার রাতে ফেনী থেকে আটক করে সুনামগঞ্জে নিয়ে আসে।
সোমবার বিকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আদালত এলাকায় দুই আইনজীবীর সহকর্মী ও ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রসীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন সাংবাদিক শহীদনূর আহমদ ও জাহাঙ্গীর আলম। তারা আসামিদের জেলহাজতে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধারণ করতে গেলে কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা।
এদিকে, আদালতে অভিনব জালিয়াতির এই ঘটনাটি প্রকাশের পর সেটি ধামাচাঁপা দিতে উঠে পড়ে লাগে একটি মহল। সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনায় এই মহল জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দুই আইনজীবীসহ আটক চার জানের বিরুদ্ধে আদালতের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলা এফআইআরভুক্ত করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ জজ আদলতে বিচরাধীন একটি অগ্রক্রয় মামলা নিস্পত্তির পর আইনজীবী আলী আহমদ মোয়াক্কেলের আমানতকৃত টাকা উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করেন। দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর অর্থ পরিশোধের জন্য আবেদনটি হিসাব শাখায় পাঠানোর পর দেখা যায় অগ্রক্রয়ের মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আইনজীবী ও মাজাহারুল ইসলাম হিসাব শাখায় পেমেন্ট অর্ডার দাখিল করে অগ্রক্রয়ের ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি জানাজানির পর এমন জালিয়াতির আরও ৫টি ঘটনা ধরা পড়ে। ছয় ঘটনার পাঁচটিতে মাজহারুল ইসলাম ও একটিতে রেজাউল করিম সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।
জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস জানায়, অ্যাডভোকেট মাজাহারুল ইসলাম পাঁচটি অগ্রক্রয় মামলায় জালজালিয়াতির মাধ্যমে নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৫ টাকা উত্তোলন করেন। আরেকটি বিবিধ অগ্রক্রয় মামলা ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা একই কায়দায় উত্তোলন করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি অবগত হবার পর সুনামগঞ্জ সদর আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন টাকা উত্তোলনকারী দুই আইনজীবী ও হিসাবরক্ষক ঘেনু চন্দ্র রায়কে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বুধবার আদেশ দেন। তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় রোববার জেলা জজের নির্দেশে ৩ জনকে আটক করে পুলিশ।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শায়েখ আহমদ জানান, আদলতের হিসাব শাখার কর্মচারীদের সহযোগিতায় বিচারপ্রার্থীর জমি অগ্রক্রয় মামলার জমা অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে আদালত ও আইনজীবীদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গটা সুরক্ষিত থাকে। সাংবাদিকদের উপ হামলার ঘটনায় তিন ও আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনজীবি সমিতি সাংগঠনিকভাবে ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে।